আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, সাতক্ষীরা থেকে : বিশ্বজুড়ে আলোচিত সাতক্ষীরার মুক্তামনি এখন হাড্ডিসার। শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে মুক্তা। এত আশা-ভরসা সব যেন বিফল হতে চলেছে। ১২ বছরের ছোট মুক্তা হাতের ব্যথার যন্ত্রণায় কাতর। কেউ কাছে গেলে মুক্তার ফ্যাল ফ্যালিয়ে তাকানো বড় বেদনার। মনে হয় এ বুঝি তার শেষ দেখা। বিরল এক রোগে আক্রান্ত এই মুক্তামনি সাতক্ষীরা সদরের বাঁশদহা ইউনিয়নের কামারবায়সা গ্রামের মোঃ ইব্রাহিম গাজীর মেয়ে। কয়েকদফা অপারেশনের পর ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট থেকে মুক্তাকে তার গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। সেখান থেকেই মুক্তা বাড়িতে রয়েছে। দিনে দিনে তার শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। অপারেশন করে হাত থেকে যা কিছু অপসারণ করা হয়েছিল তা আবারো পুরণ হয়ে গেছে। এখন আরো দুর্গন্ধ বেড়েছে, রক্ত ঝরছে। মা আসমা খাতুন মুক্তার দেখভাল করেন। প্রতিদিন হাত ড্রেসিং করেন মা। তিনি জানান, ৮-৯ দিন আগে ড্রেসিং করার সময় মুক্তার হাত থেকে বেরিয়ে আসে বড় বড় পোকা। এতে মুক্তাসহ তার পরিবার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। পোকা বের হওয়ার পর হতে এলাকার লোকজন মুক্তার কাছে যেতে যায় না। গতকাল রোববার সকালে মুক্তার গ্রামের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায় শয্যাশায়ী মুক্তা আল্লাহকে ডাকছেন। পড়ছেন দোয়া দরুদ। মুক্তামনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, কাকু আমার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন আমাকে সুস্থ করে দেন। এরপর মুক্তা অঝোরে কাঁদতে থাকেন। মুক্তার অসুখ এখন আর তার ডান হাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বাম হাত, বুক, পেট ও পায়ে ছড়িয়েছে অসুখটি। চিকন হাড়ের গায়ে চামড়া গুটিয়ে রয়েছে। মুক্তার পিতা ইব্রাহিম গাজী বলেন, ২০০৬ সালে তার দুটি যমজ সন্তান হয়। আদর করে নাম রাখা হয় হীরামনি ও মুক্তামনি। মুক্তামনি ছোট। দেড় বছর বয়সে মুক্তার ডান হাতের কবজি ফুলতে শুরু করে। এরপর সাতক্ষীরা ও খুলনা’র অনেক ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু কেনো ফল পাওয়া যায়নি। মুক্তামনি স্থানীয় মির্জানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। বড় মেয়ে হীরামনি ওই একই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশুনা করে। এছাড়া, তার দু’বছরের আল-আমিন নামের একটি ছেলে রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ঢাকা থেকে আসার পর মুক্তামনি’র দেখভাল ওর মা আসমা-ই করে থাকেন। প্রতিদিনের ড্রেসিং, খাওয়ানো সবকিছুতেই ওর মা। সংবাদকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মুদি দোকানি ইব্রাহিম গাজী বলেন, সংবাদ মাধ্যম বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার করায় বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তার ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছেন। ডাক্তাররা অনেক গুরুত্ব¡ দিয়ে মুক্তাকে চিকিৎসা করেছেন। সিংঙ্গাপুরের ডাক্তারদের সাথে ভিডিও কনফারেন্স করেছেন। তিনি বলেন, আমার আশা ছিল মুক্তা ভালো হলে নিয়ে যেতাম প্রধানমন্ত্রীকে দেখাতে। কিন্তু তা আর বুঝি হবে না। দিনে দিনে যেভাবে মুক্তার অসুখ বেড়ে চলেছে তাতে ভালো হওয়ার আশা খুবই কম। তারপরও সকলের দোয়া ও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, প্রায়ই বার্ন ইউনিটের ডাক্তারের সাথে মোবাইলে কথা হয় মুক্তামনিকে নিয়ে। মুক্তামনি’র বিষয়ে রোববার সকালে মোবাইল ফেনে কথা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সমন্বয়কারী ডাঃ সামান্ত লাল সেনের সাথে। তিনি ইনকিলাবকে জানান, মুক্তামনি’র বর্তমান শারীরিক অবস্থা তার বাবা তাকে অবগত করেছেন। মুক্তাকে আবারো ঢাকায় নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের (ডাক্তারদের) চেষ্টার কোনো রকম ঘাটতি নেই। এটি কঠিন অসুখ। তারপরও ঢাকায় নিয়ে আসলে আমরা আবারো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখব।
Author: মানবসেবা
Related Posts
Some simillar article from this label, you might also like
- Blog Comments
- Facebook Comments