এবার মিললো ভয়ঙ্কর এক তথ্য, পাগল হিসাবে যাদের চারপাশে দেখি ওরা আসলে কে?

পাগল হিসাবে যাদের- পাগল বলে সাধারণ মানুষ তাদের এড়িয়ে চলে। আসলে তারা পাগল নয়। পাগল সেজে এরা সামাল দেয় মাদকের ব্যবসা। এই পাগল নিয়মিত মেকআপও নেয়। নিয়ম করে নোংরা থাকার কৌশল শেখে। তারা রাজধানীর রাস্তায় বিভিন্ন পয়েন্টে বসে থেকে মাদকের খুচরা ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
জানিয়ে দেয় পুলিশের অবস্থান। সারাদিন এদের দেখা না মিললেও সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এদের উপস্থিতি থাকে ফুটপাতজুড়ে।মহাখালী থেকে ফেনসিডিল আর গাঁজা আসবে শ্যামলীমহাখালী ব্রিজের নিচে একজন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উল্টো পাশ দিয়ে যে লিঙ্ক রোড রয়েছে সেখানে সমান দূরত্বে তিনজন, পাসপোর্ট অফিসের সামনে একজন, সেখান থেকে শিশু হাসপাতাল পার হয়ে একজন, শ্যামলী ব্রিজের ওপর একজন।

এভাবে সাতজন মিলে পার করে দেবে প্যাডলারকে। এর মধ্যে কোথাও পুলিশের সঙ্গে বোঝাপড়ায় ঝামেলা হলে সেই খবর পরস্পরের মধ্যে আদানপ্রদান করা হয় নিমিষেই। এই পাগলদের একই এলাকায় পাওয়া যাবে তা নয়। তবে একটু এদিকে সেদিক করে রুটটা এমনই থাকে। এরা পরস্পর লাইনম্যানের মতো কাজ করে। এ রকম প্রতিটা রুটে ঘুরে ঘুরে তারা কাজ করে।

পাগল হিসাবে যাদের – এই ছদ্মবেশী পাগলদের একজন হুমায়ুন। থাকেন মহাখালী সাততলা বস্তিতে। মহাখালী বক্ষব্যাধী হাসপাতালের পাশের বস্তি থেকে মাদকের ‘হোম ডেলিভারির’ দায়িত্ব তার। কেন এ রকম কৌশল ঠিক করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের একটা এলাকাভিত্তিক লেনদেন আছে।

আমার এলাকা মহাখালী। আমি এখানে যাতে ঝামেলা না হয় সেটা দেখতেসি। কিন্তু আমার কাস্টমার বেশি শ্যামলীতে। সেখান পর্যন্ত পৌঁছাইতে হইলে এতগুলো এলাকা পার হইয়া যাইতে হয়। আবার সব পুলিশ সিস্টেমেও আসে না। তখন আমরা এই বুদ্ধি করসি।হুমায়ুন পাগল সাজে না, পাগল সাজায়, মাদকের ব্যবসাটা তার।

আলাপকালে হুমায়ুনের পাশে থাকা ‘পাগল’ রুবেল বলে, আমাদের রিস্ক কম। কারণ মানুষ হয় আমাদের পাগল ভাবে নইলে পুলিশের, সেনাবাহিনীর সোর্স মনে করে। আর ধরা খাইলে পাগলের রাস্তা অনেক।

এই খুচরা ব্যবসায়ীর রুট ধরে মহাখালী থেকে শ্যামলী পর্যন্ত যেতে লেগুনা ও রিকশা মিলিয়ে সময় লাগে এক ঘণ্টা। রাস্তার উত্তর পাশ থেকে ফেরত যেতে হয় কারণ ওপারের হিসাব আলাদা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এ ভয়াবহ মাদক ব্যবসা চলে। তারা পাগলদের চেনেন কিন্তু কেউই কাউকে কিছু বলতে চান না।অনুসন্ধানে জানা যায়, অধিকাংশ মাদকসেবীর শুরুটা সিগারেট দিয়ে এবং কৌতুহলবশত ফেনসিডিল।

এরপর মদ-গাঁজা, হেরোইন-প্যাথেড্রিন যোগ হয়। সরকারি হিসাবে দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৬০ লাখের কম দাবি করা হলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসেবে এ সংখ্যা এক কোটিরও বেশি।

মাদক নিরাময় বিশেষজ্ঞ ডা. অরুপ রতন চৌধুরী বলেন, সমাজে এখন যেসব অসঙ্গতি এবং অপরাধমূলক কাজ হচ্ছে সবকিছুর জন্য মাদক দায়ী। এভাবে মাদকাসক্তের বিষয়ে প্রশাসনিক তৎপরতা না বাড়লে এ থেকে নিরাময় সম্ভব নয়। তিনি এর পাশাপাশি সন্তানের প্রতি পারিবারিক নজরদারির পরামর্শ দিয়েছেন।

এদিকে এই দুই এলাকায় হুমায়ুনের মতো আরও কিছু ব্যবসায়ীর দৌরাত্ম্য পুলিশের জানা থাকলেও তারা তেমন কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না এর বিরুদ্ধে। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, চেষ্টা করেও ‘বড় ভাইদের’ কারণে কিছুই করার থাকে না।

এই বড় ভাইরা কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন যারা ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে তাদেরই কেউ।পুলিশের এই বক্তব্যকে দায়সারা মনে করছেন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. বজলুর রহমান।

তিনি বলেন, আমাদের নজরে বড় কোনও চালান ধরা ছাড়া তেমন কিছু পড়ে না। তবে পুলিশ চেষ্টা করলে পারে না এমন কোনও কিছু থাকতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি না।

তিনি আরও বলেন, ‘চোরাই পথে আসা নেশা দ্রব্যের নথিপত্র আমরা তৈরি করেছি। এখন কেবল সেগুলো নির্মূলে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিজি বিশ্বাস বলেন, এ বিষয়টি আমাদের জানা রয়েছে। গত দুইদিন আগে এ রকম ২০ থেকে ২৫ জনকে গ্রেফতার করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপার্দ করা হয়েছে। এদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের লোক রয়েছে। নারীদেরও ছাড় দেয়া হয়নি |

SHARE THIS
Previous Post
Next Post