অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে শিশু রাইফা খানের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত চার চিকিৎসক জামিন পেয়েছেন।
তবে জামিন শুনানির সময় আদালতে আবেগঘন বক্তব্য দিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী।
চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু ছালেম মো. নোমান শুনানির সময় বলেন, ‘শিশু রাইফার মৃত্যুতে দেশের মানুষ কেঁদেছে। তখন আমিও কান্না ধরে রাখতে পারিনি। আমার মনে হয়েছে আমার শিশুকন্যা মারা গেছে। ’ এ সময় আদালতে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। আদালতের বক্তব্য শুনে উপস্থিত আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী অনেকের চোখের কোণে অশ্রু জমে।
গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু ছালেম মো. নোমানের আদালতে আসামিরা আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। শুনানির পর আদালত অভিযোগপত্র দাখিল পর্যন্ত আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিন পাওয়া আসামিরা হলেন ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী খান, ডা. বিধান রায় চৌধুরী, ডা. দেবাশীষ সেনগুপ্ত ও ডা. শুভ্র দেব।
চার আসামির জামিন মঞ্জুরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী।
তিনি বলেন, মামলার চার আসামি উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের জামিন পেয়েছিলেন। পরে তাঁরা নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত চার চিকিৎসককে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন। তাঁদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা বন্ডে জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।
আসামিপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘রাইফার মৃত্যুতে আমরা ব্যথিত। কিন্তু মামলার বিচারের ক্ষেত্রে আইনকে প্রাধান্য দিতে হবে। ২০১ এবং ৩০৪ (ক) ধারায় অভিযোগের মামলায় আসামিরা জামিন পাওয়ার অধিকার রাখেন। আদালত এটা বিবেচনায় নিয়ে আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেছেন। ’
শুনানি শেষে শিশু রাইফার বাবা সাংবাদিক রুবেল খান বলেন, ‘আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার কারণে আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এই কারণে আমি মামলা দায়ের করেছি। আশা করছি, ন্যায়বিচার পাব। বিচারে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। ’
গত ২৮ জুন গলায় ব্যথা নিয়ে রুবেল খানের আড়াই বছর বয়সী মেয়ে রাইফা খানকে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন ২৯ জুন রাতে রাইফার মৃত্যু হয়। এর পরই ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার অভিযোগ তুলে সাংবাদিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে চকবাজার থানা পুলিশকে বিষয়টি জানানো হলে পুলিশ কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক এবং একজন নার্সকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থানায় নিয়ে যান। গভীর রাতে বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল থানায় গিয়ে সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে দম্ভোক্তি করেন এবং ডাক্তার ও নার্সকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।
এর পরই সাংবাদিক ও ডাক্তাররা মুখোমুখি অবস্থান নেন। দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টির মধ্যেই র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ম্যাক্স হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে নানা অনিয়ম শনাক্ত করে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্তেও ম্যাক্স হাসপাতালের অনিয়ম ধরা পড়ে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সির্ভিল সার্জনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটিও নানা অনিয়ম শনাক্ত করে। সিভিল সার্জনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির প্রমাণ পায় এবং তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে।
তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর রাইফার বাবা রুবেল খান বাদী হয়ে চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি এখন তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে।
Author: Ahmed sufi
Related Posts
Some simillar article from this label, you might also like
- Blog Comments
- Facebook Comments