মানব সেবার মাধ্যমে আল্লাহর সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। মানব সেবা হজরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামসহ সব রসুল ও নবীর সুন্নাত। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী দুনিয়ার প্রথম মানব-মানবী হজরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়া (আ.)। দুনিয়ার সব মানুষই তাদের বংশধর। সে অর্থে এক মানুষের সঙ্গে অন্য মানুষের সহজাত ভ্রাতৃত্বের বন্ধন রয়েছে। ইসলাম এই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরও অর্থবহ করে তোলার পক্ষে। একজন মানুষ অন্য মানুষের আপদে-বিপদে সহায়তা করবে সহমর্মিতার পরিচয় দেবে এমনটিই উত্সাহিত করা হয়েছে ইসলামে। বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কষ্টসমূহ থেকে কোনো কষ্ট দূর করবে কিয়ামতের কষ্টসমূহ থেকে আল্লাহ তার একটি কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবীকে দুনিয়াতে ছাড় দেবে আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে ছাড় দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করে যায়।’ [মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি]
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সমগ্র জীবনে সাহায্য প্রার্থীর প্রতি অকৃপণভাবে হাত বাড়িয়েছেন। হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেছেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনে কখনো কোনো সাহায্য প্রার্থীকে না বলেননি। মানব সেবাকে তিনি তার জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। কোনো অবস্থায় এ ব্রত থেকে বিচ্যুতি হননি। মদিনা রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পরও তিনি বিলাসী জীবনযাপন করেননি। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তার কাছে যেসব উপহার আসত তিনি তা গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। তার ওফাতের সময় পরিবারের জন্য দুই দিন ঘরের রুটি পেট পুরে খাওয়া যায় এমন সঞ্চয় ছিল না। ইসলামে মানব সেবাকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত আরেকটি হাদিসে। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘বিধবা ও অসহায়কে সাহায্যকারী ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য।’ (বর্ণনাকারী বলেন,) আমার ধারণা তিনি আরও বলেন, ‘এবং সে ওই সালাত আদায়কারীর ন্যায় যার ক্লান্তি নেই এবং ওই সিয়াম পালনকারীর ন্যায় যার সিয়ামে বিরত নেই।’ (বোখারি, মুসলিম)
লেখক : মাওলানা মুহাম্মদ জিয়াউদ্দিন