ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় কোটা সংস্কার নেতা সুহেলের মা........

অভাগী মা জমিলা বেগম। বছরখানেক আগে স্বামীকে হারিয়েছেন। এরপর থেকে জীবনযুদ্ধে সংগ্রাম করছেন পাঁচ সন্তানকে নিয়ে। এদের মধ্যে একমাত্র শিক্ষিত কোটা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা এপিএম সুহেল।


অনেক স্বপ্ন নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন সুহেল। বড় ভাই জুয়েল ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পিয়নের চাকরি করেন। তিনিই একটি মেসে সুহেলকে রেখে পড়াশোনা করাচ্ছেন।

বর্তমানে তার ভাই গ্রামের বাড়িতে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে পরিবারের সার্বিক দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হঠাৎ করেই কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। এতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন সুহেল। আর এটিই কাল হলো তার জন্য। কোটাবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অপরাধে সোহেলকে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা।



আজও তার শরীরে রড দিয়ে পেটানোর রক্ত জমাট বাঁধা দাগ। একটু নড়াচড়া করলেই শরীরের বিভিন্ন হাড়ে ব্যথা লাগে। মুখের ঠোঁটের ভেতরে ও বাইরে রয়েছে ১১টি সেলাই।

সেই আহত সন্তানের পাশে বসে মা জমিলা বেগম চোখের পানি ফেলে কাঁদছেন আর আহাজারি করছেন- এখন কি হবে আমার ছেলে সুহেলের ভবিষ্যৎ। আসলে কি আমার রক্তের বাঁধন ও আমার ঘরের প্রদীপ শিখাটিকে সন্ত্রাসীরা নিভিয়ে দেবে। আবার কি সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যেতে পারবে? ওরা কি তাকে বাচঁতে দেবে? এমন শঙ্কাই বারবার অভাগী মায়ের কাছে বারবার হাতছানি দিচ্ছে।

আহত সুহেল মায়ের আর্তনাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করে মাকে বুঝানোর চেষ্টা করছেন যে, মা তুমি আমাকে নিয়ে কোনো চিন্তা করো না। আমাকে যেহেতু প্রাণে মারতে পারেনি ওরা, আর পারবেও না। কারন আমার পাশে আছে লাখো ছাত্র সমাজ। মা তুমি দেখে নিও সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি আগের মতোই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারব। আমি কোনো অন্যায় কাজ করিনি। সুতরাং আমাকে নিয়ে তুমি আর কোনো টেনশন করো না।

তারপরও মায়ের টেনশনের শেষ নেই। কথায় কথায় বলে ফেলল সুস্থ হলে বাড়ি নিয়ে যাব ছেলেকে। বড় আদর আর মমতায় বড় করেছি সন্ত্রাসীদের হাতে মারা যেতে নয়। গ্রামে গিয়ে কৃষি কাজ করেও জীবন চালাতে পারবে। এই শহরে কোনো মায়ের সন্তানই নিরাপদ নয়।

তবে অসুস্থ সুহেলের ডাক্তাররা জানিয়েছেন, আগামী রোববার সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বাড়ি যেতে পারবে সুহেল।

আহত সুহেল পরিবর্তন ডটকমকে জানান, কোটা  আন্দোলন এটা আমার একার নয়। যৌক্তিকভাবে সব ছাত্রই এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। জানি না মুষ্ঠিমেয় কোনো একটি সংগঠনের কিছু লোকের কেন গাত্রদাহ হচ্ছে। তবে সরকার আমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করায় আপাদত আমরা তাদের দিকেই চেয়ে আছি। আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিবারও শঙ্কার মধ্যে আছে।

সুহেল আরো জানান, আমাকে নিয়ে বেশ কয়েকটি অনলাইন পত্রিকা বাজে ছবি যুক্ত করে বদনাম ছড়ানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি। আমি কখনও জেনেশুনে অন্যায় করিনি এবং ভবিষ্যতেও করব না।

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কোটা আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আলম নুরু জানান, থানায় সুনির্দিষ্টভাবে নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করার পরও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো কিছুই করতে পারেনি পুলিশ। বরং সুহেল ও তার বন্ধুদেরকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। সরকার আমাদেরকে বলেছেন দ্রুতই প্রজ্ঞাপন জারি করবে। সেই আশায় আমরা আছি। আমরা চাই ছাত্ররা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাক। আর সুহেলের উপর আক্রমণকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হউক। এটাই সবার প্রত্যাশা

SHARE THIS
Previous Post
Next Post