স্বপ্নের দেশ আমেরিকা যাওয়ার পরিবর্তে লাশ হয়ে মায়ের কোলে ফিরছেন হৃদয়-নাঈম.....

অবৈধভাবে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় টেক্সাসের রিও গ্রান্ড নদীতে ডুবে মারা যান বাংলাদেশি দুই তরুণ মাইনুল হোসেন হৃদয় (২২) ও শাহাদাত হোসেন নাঈম (১৮)। স্বপ্নের দেশ আমেরকিা যাওয়ার পরিবর্তে এখন লাশ হয়ে মায়ের কোলে ফিরছেন নোয়াখালীর হতভাগ্য এই দুই তরুণ।

নদী থেকে মৃতদেহ উদ্ধারের দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে নানান আনুষ্ঠানিকতা শেষে রোববার (৩ জুন) জোহরের নামাজের পর ব্রুকলিনের বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টারে তাদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। রোববার ছুটির দিন হওয়ায় নিহতদের পরিচিত-স্বজন, বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির নেতৃবৃন্দ, মানাবাধিকার সংগঠন ড্রাম’র সংগঠক ও নোয়াখালীর বাসিন্দাদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি অংশ নেন জানাজায়। সোমবার অথবা মঙ্গলবার তাদের মরদেহ পাঠানো হবে বাংলাদেশে।

জানাজা শেষে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মানবাধিকারকর্মী কাজী ফৌজিয়া ঝুঁকি নিয়ে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিরুৎসাহিত করা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রবাসী নোয়াখালীবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

গত ১২ এবং ১৪ মে নদী থেকে নাঈম এবং হৃদয়ের মৃতদেহ উদ্ধার করে রাখা হয় টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের একটি হাসপাতালে। দুই মৃতদেহ গ্রহণ থেকে শুরু করে পুরো প্রক্রিয়া সমন্বয় করেন ড্রাম’র সংগঠক কাজী ফৌজিয়া এবং বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি ইউএসএ ইনক্’র সেক্রেটারি জাহিদ মিন্টু।


নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার মীরওয়ারিশপুর ইউনিয়নের মীরআলীপুর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মাইনুল হোসেন হৃদয় (২২) দক্ষিণ আফ্রিকায় কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সাপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। ৮ মার্চ বিভিন্ন দেশ ঘুরে পৌঁছান ব্রাজিল।

সোনাইমুড়ি উপজেলার দেওটি ইউনিয়নের দুর্গাদৌলতপুর গ্রামের হারুনুর রশিদের ছেলে শাহাদাত হোসেন নাঈম (১৮) মার্চের প্রথম সাপ্তাহে বাংলাদেশ থেকে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে। দু’জনই তাদের পরিবারের একমাত্র ছেলে। দু’জনই ৮ মে মেক্সিকো সীমান্ত থেকে পিতা-মাতার সঙ্গে মোবাইলে সর্বশেষ কথা বলেন।

গত ৮ মে মেক্সিকো সীমান্ত থেকে সর্বশেষ বাবা হারুনুর রশিদের সঙ্গে কথা বলেন শাহাদাত হোসেন নাঈম। এইচএসসি পাস করা ১৮ বছরের নাঈম সে সময় বাবাকে জানায়, ‘পরদিন ভোরে সে রিও গ্রান্ড রিভার পাড়ি দিয়ে টেক্সাসে উঠবে। কবে আবার কথা হবে জানে না। ঠিকমতো পৌঁছে সে ফোন দেবে।’

একইভাবে ৮ মে সকালে (বাংলাদেশ সময় রাতে) মা হালিমা আক্তারের সঙ্গে কথা হয় মাইনুল হোসেন হৃদয়ের। সে সময় হৃদয় মা’কে বলেন- ‘রাতে (বাংলাদেশ সময় ৯ মে সকালে) নদীতে নামবেন, সাঁতরে যেতে পারলেই আমেরিকা।’

SHARE THIS
Previous Post
Next Post