সেই দুই শিশুর মায়ের পাশে কুড়িগ্রামের ডিসি: নিচ্ছেন সন্তানদের দায়িত্ব, দিচ্ছেন বাড়ি......


সময়ের কণ্ঠস্বর- আলহামদুলিল্লাহ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ফরিদা নামে এক মা রাজধানীর কলাবাগানের ওভারব্রিজের নিচে ফুটপাতে শুয়ে কাতরাচ্ছেন। পাশে তার দুই অবুঝ সন্তান। মাতৃসেবায় ব্যস্ত এ দুই ছোট্ট শিশু। মাথায় পানি ঢেলে মায়ের জ্বর প্রশমন করার চেষ্টা করছে বড় ছেলেটি। পাশে কারা যেন রুটি, কলা রেখে গেছে।

পানি রাখার জন্য কোনো পাত্রও নেই তাদের। কুড়িয়ে পাওয়া মিনারেল ওয়াটারের বোতলেই কাজ চালিয়ে নিচ্ছে শিশুটি। ছোট ছেলেটি আর কিছু করার ক্ষমতা নেই দেখে বিদ্যুতের একটি খুঁটিতে মাথা ঠেকিয়ে রেখে তার অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে।

এই দৃশ্যটির কয়েকটি ছবি সাভার ভলেন্টিয়ার নামের একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা পারভেজ হাসান ক’দিন আগে ফেসবুকে পোস্ট করলে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। পরে পারভেজ তার কয়েকজন ভাইসহ ফরিদাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।

এসময় জানা যায়, অসুস্থ ওই মা‌য়ের নাম ফ‌রিদা। তার বাড়ি কু‌ড়িগ্রা‌মে। তিনি রাজধানীর কলাবাগান ওভারব্রিজের নিচে একটি খুপড়ি ঘরে থাকেন। জী‌বিকার তা‌গি‌দে কয়েক বছর আগে তারা ঢাকায় চলে আসেন। কিন্তু অভাব থে‌কে মু‌ক্তি পায়‌নি অসহায় ওই মা।

কষ্টে জীবন-যাপন করা ফরিদা বেগমের দূরাবস্থা নিয়ে তখন সময়ের কণ্ঠস্বরসহ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করে। এসব সংবাদ নজরে এলে নিঃস্ব ফরিদার পাশে এসে দাঁড়ালেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন।

ঘর-বাড়িহীন ফরিদার পরিবারকে কুড়িগ্রামে আবাসনের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি পরিবারের উপার্জনের ব্যবস্থা এবং সন্তানদের পড়ালেখার ব্যবস্থার কথা বলেছেন জেলা প্রশাসক।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাস‌নের ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত এক‌টি পোস্ট দি‌য়েছেন। পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘রাজধানীর কলাবাগানে ফুটওভার ব্রিজের নিচে পড়ে থাকা সেই অসুস্থ মায়ের দায়িত্ব নিতে চাই আমি। শুধু কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক হিসেবে নয়, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে নিজের দায়বদ্ধতা থেকে ওই পরিবারকে পুনর্বাসন করবো। এছাড়া ওই পরিবার যাতে সচ্ছলভাবে চলতে পারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সে ব্যবস্থাও করা হবে।’

ইতিমধ্যে রাজধানীর কলাবাগান ওভারব্রিজের নিচে ফরিদাদের ঝুপড়ি ঘরে গিয়ে দেখা করে এসেছেন জেলা প্রশাসক। কুড়িগ্রামে ফিরে যেতে আগ্র্রহ প্রকাশ করায় ফরিদাদের সেখানে যাওয়ার ব্যবস্থাও ইতিমধ্যে করেছেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার রাতে তাদের গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে।

এসময় জেলা প্রশাসক বলেন, ঢাকায় কাজে এসেছিলাম। কিন্তু আগেই ফেসবুকে এবং পত্রিকায় এদের নিয়ে খবর পড়লাম। খুব খারাপ লেগেছে তাদের জন্য। কুড়িগ্রামের মানুষ তারা ঢাকায় ফুটপাতে এইভাবে জীবন যাপন করবে আর আমরা কিছু করবো না এটা হয় না। তাদের জন্য সবকিছুর ব্যবস্থা করা আমাদের দায়িত্ব।

তিনি বলেন, দুই শিশুর লেখাপড়ার দায়িত্ব আমি নিয়েছি। এ অসহায় পরিবারকে আমি সব রকমের সহায়তা করব। তাদের থাকার জায়গা ও ঘর তোলার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে টাকা দেয়া হবে।

‘প্রয়োজনে তাদের হালচাষের গরু দেয়া হবে। এমন অসহায় দুস্থদের জন্য সরকারের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। সেখান থেকেই সব ধরনের ব্যবস্থা করা হবে।’

মানবতার জয় হোক, ভালো আছেন সেই ‘মা’

SHARE THIS
Previous Post
Next Post