মহিবুল্লাহ্ আকাশ :: কাঁদতে কাঁদতে দু’চোখের জল শুকিয়ে ফেলা ছবির মহিলাটির নাম সালেহা বেগম। একদিন ছেলের মুখের হাসির মাঝে রত্নগর্ভা মায়ের তৃপ্তি নিতেন তিনি। আজ একজন মা, কিন্তু অসহায় মা। ছেলের জন্য জাতির কাছে হাত পেতে ভিক্ষা চাচ্ছেন তিনি। একজন মায়ের করুণ আর্তি একটাই, তিনি তার ছেলের মুক্তি চান। সালেহা বেগম ভিক্ষা চান ১০ দিনের পুলিশি রিমান্ডে থাকা একমাত্র ছেলে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা রাশেদ খানকে। ছেলেহীন এই শূন্যতার হাহাকার থেকে তিনি মুক্তি চান।এজন্য তিনি ঝিনাইদহ থেকে এসে দিন-রাত অশ্রুসিক্ত চোখে ধর্ণা দিচ্ছেন রাজধানীর ডিবি অফিস, ডিএমপি, শাহবাগ থানা, সিএমএম কোর্টে। যাকেই সামনে পাচ্ছেন, তাকেই কান্নামাখা কণ্ঠে রাশেদকে মুক্ত করার আর্জি জানাচ্ছেন। জেলে থাকা ছেলের জন্য একজন মায়ের এমন আর্তনাদ দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি অনেকেই।সালেহা বেগমের সঙ্গে কথা হয় শাহবাগের একটি খাবারের দোকানে। সেখানে অবস্থান করা সবার উদ্দেশ্যে হাত জোড় করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘আমার মণিকে তোমরা মাফ করে দাও। শুধু মুক্তি দাও। ও আর চাকরী চাবে না গো। ওকে ভিক্ষা দাও। আমার মণিকে আমি ঢাকায় আর রাখব না গো। গ্রামে নিয়ে চলে যাব।’রাশেদের বাবা নবাই বিশ্বাস রাজমিস্ত্রি, মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। রাশেদের দুটি বোন। একজন তার বড়, অন্যজন ছোট। শ্রমজীবী দম্পতি দাঁতে দাঁত চেপে সন্তানদের মানুষ করার চেষ্টা করে গেছেন।রাশেদও ছিলেন মেধাবী, ৫ম ও ৮ম শ্রেণীতে বৃত্তি পেয়েছিলেন। বাবা মা না খেয়ে থেকে, মুরগী-ছাগল বিক্রি করে রাশেদকে লেখাপড়ার খরচ দিয়েছেন। তিনিও সে কষ্ট বৃথা যেতে দেননি। লেখাপড়া করেছেন।সালেহা বেগম তাই স্বপ্ন দেখছিলেন, তার ছেলে তাদের কষ্টের দিনের অবসান করবেন। কিন্তু তা আর হলো না, এখন রাশেদের নিজের ভবিষ্যতই অনিশ্চয়তার মুখে। এই কথাগুলো বলতে বলতে কান্না চেপে রাখতে পারেনননি তিনি। কাঁদছেন, কিন্তু চোখ থেকে কোন জল গড়িয়ে পড়ছে না। মায়ের চোখের পানি আজ শুকিয়ে গেছে।তিনি বলেন, আমার মণি তো কোনো অন্যায় করেনি। সে শুধু একটা চাকরি করতে চেয়েছিল। সে তো সরকারি চাকরিই করতে চেয়েছিল। সরকারকে ফেলতে যাবে কেন?প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী রাশেদ খান। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে তৈরি ছাত্রদের মঞ্চ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক তিনি। তিনটি মামলার আসামি রাশেদ খান। তার বিরুদ্ধে রোববার পৃথক দুই মামলায় ৫ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। রাশেদকে ১ জুলাই রোববার রাজধানীর ভাষানটেক থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাশেদকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয় থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
Author: মানবসেবা
Related Posts
Some simillar article from this label, you might also like
- Blog Comments
- Facebook Comments