ইসলাম একটি বিশ্বাস, একটি মূল্যবোধ ও একটি আদর্শকেন্দ্রিক জীবন বিধান। ইসলাম তার আদর্শ দিয়ে বিপথগামী মানুষকে পশুত্বের স্বভাব থেকে মনুষ্যত্বের স্বভাবে নিয়ে আসে। এর জন্য প্রয়োজন আদর্শকেন্দ্রিক পরিমণ্ডল। আর মানুষ আদর্শকেন্দ্রিক পরিমণ্ডলে চলার ক্ষেত্রে প্রয়োজন কতিপয় মূলনীতি। তার মধ্যে জনকল্যাণ ও মানবসেবা অন্যতম। আল-কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, যারা ইমান আনে এবং সৎ ও কল্যাণকর কাজ করে তারাই হলো জগতের সৃষ্টির সেরা। তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে প্রতিদান চিরকাল বসবাসের জান্নাত। (সূরা বাইয়েনাত : ৭-৮)।
মানবসেবা এমন এক ইবাদত যাকে রসুল (সা.) ইমানের অংশ সাব্যস্ত করেছেন। মেশকাত শরিফের ৪ নং হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, সত্তরের অধিক ইমানের শাখা-প্রশাখা রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো মানুষের কষ্ট হয় এমন বস্তুকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া। অর্থাৎ মানুষের চলাচলের সুব্যবস্থা করা। পথহারা পথিকদের সঠিক পথের সন্ধান দেওয়া। অন্ধ, অসুস্থ, বিকলাঙ্গ ও লুলা ব্যক্তিদের কাজে সহযোগিতা করা। অভাবী, অনাথ, আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসা। বস্ত্রহীনদের বস্ত্রের ব্যবস্থা করা। অসুস্থদের সেবা-শুশ্রূষার ব্যবস্থা করা। মানুষের দুঃখ-সুখের সঙ্গী হওয়া মানবসেবার অন্তর্ভুক্ত। এ সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, বস্তুত আমি তাকে (মানুষকে) দুটি পথ প্রদর্শন করেছি। অতঃপর সে ধর্মের ঘাঁটিতে প্রবেশ করেনি। আপনি জানেন কি সে ধর্মের ঘাঁটি কি? তা হচ্ছে দাসমুক্তি অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে অন্নদান, এতিম, আত্মীয়কে ধূলি-ধূসরিত মিসকিনকে। (সূরা বালাদ : ১০-১৬) বস্তুত মানবসেবার বিষয়টি অত্যন্ত ব্যাপক। মানুষের দুনিয়াবী প্রয়োজন মিটানো যেমন মানবসেবার অন্তর্ভুক্ত, অনুরূপ পরকালের প্রয়োজন মিটানোও মানবসেবার অন্তর্ভুক্ত। পরকালে আমলে ছালেহা তথা সৎকাজের প্রয়োজন হবে। এ প্রয়োজনগুলো হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করে তা পুরা করার ফিকির করা ও মহান স্রষ্টা আল্লাহর দরবারে দোয়া করা। ধর্মহীনদের ধর্ম গ্রহণ করার ব্যবস্থা করা। ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তিদের ধর্মীয় বিষয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। ইবাদতের পন্থা ও পদ্ধতি সম্পর্কে না জানা ব্যক্তিকে তা শিখিয়ে দিয়ে তার ওপর জীবন পরিচালনায় উদ্বুদ্ধ করাও মানবসেবার অংশ।
আল্লাহপাক আমাদের মানবসেবার গুরুত্ব বুঝে মানবসেবায় আত্মনিয়োগ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : খতিব, বায়তুল আমান জামে মসজিদ, বারিধারা, ঢাকা।