মানবসেবা উত্তম এবাদত

ইসলামের অনুপম আদর্শ হলো সব ভেদাভেদ ভুলে মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠন তথা মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা। সৃষ্টিকর্তার ওপর ইমান আনার পর মানুষের সর্বোত্তম ইবাদত মানুষকে ভালোবাসা; আর সবচেয়ে বড় গুনাহ হচ্ছে মানুষকে দুঃখ-কষ্ট দেওয়া। মুসলমান-খ্রিস্টান-হিন্দু-বৌদ্ধসহ যত ধর্মাবলম্বী আছে, সব মানুষই অন্য মানুষের ভাই। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানবজাতি! আমি তোমাদের একজন নর ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। আর আমি তোমাদের অনেক সম্প্রদায় ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অন্যকে চিনতে পারো।’ (আল-হুজুরাত, আয়াত : ১৩)
ইসলামের শিক্ষানুযায়ী বিশ্বমানবতার সৌন্দর্য হলো আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি। বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী মানুষে মানুষে সম্পর্ক যত সহনশীল, সম্প্রীতিময় ও মানবীয় হবে, সমাজে ততই সুখ-শান্তি ও নিয়ম-শৃঙ্খলা বিরাজ করবে। তাই কেউ দুঃখ-কষ্টে পড়লে বা বিপদগ্রস্ত হলে অন্যরা তার দুঃখে দুঃখিত বা ব্যথিত হলেই চলবে না, বরং তার দুঃখ-কষ্ট লাঘবের বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সব জীবের প্রতি দয়া করো, আল্লাহও তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (মিশকাত) স্রষ্টাকে পেতে হলেও আমাদের অন্তরে মানুষের প্রতি সেবা ও ভালোবাসার মানসিকতা থাকা চাই। এ ক্ষেত্রে মনে রাখা চাই, অন্তরে আগ্রাসী মনোভাব পোষণ করে লোক দেখানো মানবসেবা বা এবাদতে প্রকৃত খোদাপ্রেমিক হওয়া যায় না।
মানবসেবার জন্য অনেক ধনসম্পদের দরকার নেই, দরদি ও বিশুদ্ধ মনের প্রয়োজন। একজন ব্যবসায়ী যদি মানুষকে ওজনে কম ও মালামালে ভেজাল না দেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় অহেতুক দ্রব্যমূল্য না বাড়িয়ে সঠিক দামে পণ্য বিক্রি করেন অথবা চিকিৎসক যদি ভিজিট কম নিয়ে গরিব রোগী দেখেনÑ তাহলে এসবই হবে মানবসেবা। দরিদ্র মানুষ, বিপন্ন মানুষ যেমন মহান আল্লাহর প্রিয়, তাদের সহায়তার মাধ্যমে তেমনি আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ রয়েছে সমাজের বিত্তবান ও সামর্থ্যবানদের।
মুমিনের পরিচয় ও গুণাবলি বর্ণনা করতে গিয়ে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিন তারা, যারা নামাজ কায়েম করে; আর তাদের আমি যে রিজিক দান করেছি, তা থেকে খরচ করে। তারাই হলো সত্যিকার মুমিন। তাদের জন্য রয়েছে তাদের রবের কাছে ক্ষমা এবং সম্মানজনক রিজিক। (সুরা আনফাল, আয়াত : ৩-৪)।
লেখক :  ফয়জুল আল আমীন

SHARE THIS
Previous Post
Next Post