সাকিব-তামিমের মায়ের চোখে আনন্দ অশ্রু

দুই ভাই টেবিলে রাখা হাতে থুতনি ঠেকিয়ে মনোযোগ দিয়ে সকলের কথা শুনছে। সাকিব আল হাসান খানিক ধির-স্থির, তামিম ইকবাল চঞ্চল। তবে দু’জনের চোখেই বড় হওয়ার স্বপ্ন। বাবাকে হারিয়ে যে দুঃখের সাগরে ভাসছে দুই ভাই, সেই সাগরে একমাত্র ভরসা মায়ের দিকে তাকাচ্ছেও বারবার।
মায়ের চোখ তখন অশ্রুভেজা। কিংকর্তব্যবিমূঢ়। বাকরুদ্ধও বটে। অসহায় মা ঘোমটা টেনে কান্নার লজ্জা নিবারণের চেষ্টা করছেন। ভেজা চোখ মুছছেন ক্ষণে ক্ষণে। তবে মা সাথী আকতারের দুঃখের কান্নায় চোখ ভাসেনি আজ। চোখজুড়ে ছিল শুধুই আনন্দ অশ্রু।
jagonews24
মঙ্গলবার বিকেলে এমনই এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয় জাগোনিউজ২৪.কম অফিসে। গত ৮ এপ্রিল ‘কোনো সাকিব-তামিম মাঠ কাঁপায়, কোনো সাকিব-তামিম ভিক্ষা করে’ শিরোনামে জাগো নিউজে সংবাদ প্রচার হয়। আর এ সংবাদেই যেন ভাগ্য পরিবর্তনে ছোঁয়া লাগে সাথী আকতারের।
সংবাদটি নজরে আসে দেশের স্বনামধন্য বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা ইউএস বাংলার পরিচালক মাহবুব ঢালির। অসহায় মা সাথী আকতার এবং তার দুই সন্তানকে সাহায্যের ঘোষণা দেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রতি মাসে সাকিব ও তামিমের পড়ালেখা বাবদ ১০ হাজার টাকা করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। ঘোষণা দেন আরও সহযোগিতার।
jagonews24
মঙ্গলবার জাগো নিউজ অফিসে এসে সাথী আকতারের হাতে নগদ অর্থ তুলে দেন মাহবুব ঢালি।
এ সময় ইউএস বাংলার পরিচালক মাহবুব ঢালি বলেন, সবার আগে মানুষ সত্য। মানুষ যদি মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে সমাজে এত বৈষম্য থাকার কথা নয়। অন্যের বিপদে এগিয়ে আসাই হচ্ছে মানবিকতা।
jagonews24
তিনি দুঃখিনী এ মায়ের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে বলেন, সাকিব ও তামিম যতদিন পড়াশোনা করতে চাইবে, ততদিন পাশে থাকবো। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাইলেও সহযোগিতা করবো। এমনকি চাকরি পেতেও পাশে থাকবো।
জাগো নিউজ-এর প্রধান বার্তা সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার বলেন, মানুষ এখন অতি আপনজনদেরই ভুলে যাচ্ছে। এমন সময় ইউএস বাংলার পরিচালক মাহবুব ঢালির এ মানবিকতা নিঃসন্দেহে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। একজন অসহায় মায়ের সন্তানদের মানুষ করার আকুতিতে আজকের এ অনুদান সকলকে অনুপ্রাণিত করবে।
জাগো নিউজের সহকারী সম্পাদক ড. হারুন রশিদ-এর সঞ্চালনায় এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাগো নিউজের বিশেষ প্রতিনিধি ফজলুল হক শাওন, ফিচার সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আরমান, সহকারী বার্তা সম্পাদক মাহাবুর আলম সোহাগ প্রমুখ।
jagonews24
সাহায্য পেয়ে সাকিব-তামিমের মা বলেন, সাকিবের যখন এক বছর বয়স তখন ওর বাবা দুর্ঘটনায় মারা যায়। ক্রিকেট ভক্ত বাবাই ওর নাম রেখেছিলেন সাকিব। স্বামী মারা যাওয়ার সময় তামিম ছিল গর্ভে। খালাতো ভাই রাসেল ওর নাম রেখেছে তামিম। রাসেলও ক্রিকেট ভক্ত।
সাথী আকতার বলেন, তাদের বাবা মারা যাওয়ার পরেই দুঃখের সাগরে ভাসতে শুরু করি। ভিক্ষে করে দুই সন্তানকে মানুষ করছি। আজ থেকে আর ভিক্ষে করতে হবে না। এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।
 সুত্র:-@

SHARE THIS
Previous Post
Next Post